ভূমিকা

  ভূমিকা

আমাদের ধৰ্ম্মে নানাশাস্ত্র, বিবিধ ধৰ্ম্মমত, ধৰ্ম পথও বিভিন্ন। ঈদৃশ অবস্থায়। মানবগণ কোনপথ অবলম্বন করিবেন? তাই গীতায় বলা হইয়াছে।

সংসার-সীগরং ঘােরং তত্ত্ব মিচ্ছতি যাে নরঃ।

গীতানাবং সমাসাদ্য পারং যাতি সুখেন সঃ।। 

অর্থাৎ যে ব্যক্তি ভয়ঙ্কর সংসার রূপ সমুদ্র উত্তীর্ণ হইতে বাসনা করেন; তিনি গীতারূপ তরণীর আশ্রয় করিয়া অনায়াসে সংসার-সমুদ্রের তীরে উপনীত হইতে পারেন। বাস্তবিক পক্ষে ধৰ্ম্মবিভ্রান্ত জনগণের সহজ ও শ্রেষ্ঠ পথপ্রদর্শক গীতা। ইহাতে ধর্মীয়, সামাজিক, রাজনৈতিক—সব দিকই আলােচিত হইয়াছে। সংসারী সংসারত্যাগী সন্ন্যাসী নয়, সন্ন্যাসীর জীবন ত বরং সহজ ও সরল। কিন্তু সংসার ধর্ম যেরূপ কঠোর সেইরূপ জটিল। কিরূপে মানব এই সংসার-ধৰ্ম্মের মধ্যদিয়া ভক্তিমার্গ তথা মুক্তিমার্গে উপনীত হইতে পারে গীতা তাহারই দিগদর্শক। সংস্কৃত ভাষায় লিখিত গীতা জনসাধারণের বােধগম্য নয়। ভাষা হৃদয়স্পর্শী।

হইলেই বা উহাদ্বারা লােক প্রভাবান্বিত হইবে কেন? সেইজন্য। সৰ্বসাধারণের বােধগম্য করিবার উদ্দেশ্যে সহজ বাংলাভাষায় ছন্দোবদ্ধ বাক্যে শ্রীমদ্ভগবদগীতার শ্লোকগুলির মর্মকথা লিখিয়া সকলের নিকট উপস্থিত করিবার সবিশেষ চেষ্টা করিয়াছি। পরিশেষে প্রত্যেক অধ্যায়ের। সারকথাগুলিও বিবৃত হইয়াছে। আমার এই আন্তরিক প্রয়াস দ্বারা। জনসাধারণ উপকৃত হইলে আমার চেষ্টা সার্থক মনে করিব।

                                                                                              

গীতাপাঠে কি ফললাভ হয়
গীতাপাঠে কি ফললাভ হয় ? 

এ সম্বন্ধে ব্রহ্মার উক্তির সারমর্ম এই– 

প্রথম অধ্যায়- পাঠ করিলে মানবমন পবিত্র হয়। 

দ্বিতীয় অধ্যায়- পাঠ দ্বারা বুদ্ধি নিৰ্মলতা লাভ করে। 

তৃতীয় অধ্যায় -পাঠে পাপ বিদূরীত হয়।

 চতুর্থ অধ্যায় -পাঠ করিলে ব্রহ্মহত্যা ও স্ত্রীহত্যা পাপ তৎক্ষণাৎ দূরীভূত হয়।

 পঞ্চম অধ্যায় -পাঠে চৌৰ্যজাত পাপ বিনষ্ট হয়।

 ষষ্ঠ অধ্যায় -পাঠ করিলে দুর্ভাগ্য নাশ হয়।

 সপ্তম অধ্যায়- পাঠদ্বারা বুদ্ধি নিৰ্ম্মল হয়। 

অষ্টম অধ্যায় -পাঠ করিলে অভক্ষ্য ও অপেয়জাত পাপ হইতে মুক্তিলাভ হইয়া থাকে।

 নবম অধ্যায় -পাঠে পৃথিবীদানের তুল্য পুণ্য অর্জিত হয়।

দশম অধ্যায় -পাঠদ্বারা সকল পাপ বিনষ্ট হওয়ায় জ্ঞানলাভ হয়। 

একাদশ অধ্যায়- অধ্যয়ন করিলে ব্রহ্মজ্ঞান লাভ হওয়ায় মুক্তি হয়। 

দ্বাদশ অধ্যায় -পাঠে ঈশ্ববে বিশুদ্ধ ভক্তি জনে৷ 

ত্রয়ােদশ অধ্যায় -পাঠ করিলে জ্ঞাননেত্র। বিকাশহেতু শক্তিলাভ হয়। 

চতুর্দশ অধ্যায় -অধ্যয়নদ্বারা অশ্বমেধাদি যজ্ঞের ফল লাভ হয়। 

পঞ্চদশ অধ্যায়- পঠনদ্বারা নিৰ্ম্মল জ্ঞানলাভ। করিয়া যােগী হওয়া যায়। 

যােড়শ অধ্যায়- পাঠ করিলে মানব সংসার বন্ধন হইতে মুক্ত হয়। 

সপ্তদশ অধ্যায়- অধ্যয়ন করিলে ভক্তজন সুনিশ্চিত বাজপেয় নামক যজ্ঞের ফল লাভ করিতে সমর্থ হয় ও ভগবৎ প্রেম লাভ করিয়া মুক্তির জন্য সচেষ্ট হয়। 

ভক্তি সহকারে অষ্টাদশ অধ্যায়- পাঠ করিলে জ্ঞানাগ্নিদ্বারা তাঁহার সৰ্ব্ব পাপ বিনষ্ট হওয়ায় নিঃসন্দেহে জীবন্মুক্ত হয়।

              

- মঙ্গলাচরণ -

ভাগবত গীতা গ্রন্থ সৰ্ব্বশাস্ত্র সার।

ভক্তি ভাবে পাঠ কর পাইবে নিস্তার।।

মকরে প্রয়াগে করে কোটী কন্যাদান।

পুণ্য উপদেশ নাহি ইহার সমান।।

শত অশ্বমেধ যজ্ঞ রাজসূয় করে।

কৃষ্ণ ভক্তজন তুল্য ফল নাহি ধরে।।

কভাবে ভজ প্রাণী দেব নারায়ণ।

ভব-কুম্ভীপাকে যেন না হও মগন।।

দৃঢ়ভক্তি হৈলে হবে গােবিন্দের জন।

মনুষ্য জন্মের সার গীতা অধ্যয়ন।।

কোন কালে না পাইবে কৃষ্ণ সম বন্ধু।

গীতা পাঠে কৃষ্ণাধীন তরিবে, ভবসিন্ধু।।

কৃষ্ণ কৃষ্ণ বলিবারে নাহি চাহি ধন।

কৃষ্ণ ভজ সর্বত্র পাইবে উদ্ধারণ।।

হেন প্রভু না পাইবে অখিল ভুবনে।

ভজ কৃষ্ণ ভজ কৃষ্ণ দ্বিজ পশু ভনে।।

 - 😔 -         

👉পরবর্তী অধ্যায় । 👇


Comments