মধুময়
পদ্যগীতা
প্রথম অধ্যায়
অর্জ্জুন-বিষাদ-যােগ
ধৃতরাষ্ট্র কহিলেনঃ -
ধৃতরাষ্ট্র কহিলেন সঞ্জয়ে তখন।
কহ শুনি মতিমান যুদ্ধ বিবরণ।।
ধৰ্ম্মক্ষেত্র কুরুক্ষেত্রে হয়ে সমাগত।
কৌরব পাণ্ডব সৈন্য একত্রে মিলিত৷৷
অতঃপর কি করিল কহ বিবরণ।
শুনিয়া সুস্থির হােক আমার জীবন।।১
সঞ্জয় কহিলেনঃ-
সঞ্জয় কহিল তবে শুনহ রাজ
সবিশেষ কহিতেছি যুদ্ধ বিবরণ।।
হহেরিয়া পাণ্ডব- সৈন্য সজ্জিত তখন।
দ্রোণাচাৰ্য্য পাশে কহে রাজা দুৰ্য্যোধন।। 2
একত্র হয়েছে যত পাণ্ডবের, সেনা।
যুদ্ধ বিনা নাহি করে অন্য আলােচনা।।
ভীমার্জুন আদি বীর বিক্রমে ভীষণ।
বিরাট সাত্যকি আর দ্রুপদ রাজন।।
কাশীরাজ ধৃষ্টকেতু অতি সুশােভন।
পুরুজিত কুন্তীভােজ আর চেকিতান।।
রাজা যুধামন্য যিনি বিক্রমে অপার।
উত্তমৌজা আদি সবে বলের আধার।।
মহাবীর অভিমন্যু সুভদ্রা নন্দন।।
দ্রৌপদীর পঞ্চপুত্র বিক্রমে ভীষণ।।৩-৬
সুবিখ্যাত রয়েছেন যতেক রাজন।
তাহাদের নাম এবে করুন শ্রবণ৷৷
স্বয়ং আপনি পুত্র অশ্বত্থামাসহ।
রয়েছেন বীরকর্ণ ভীষ্ম পিতামহ।।
ভূরিশ্রবা সােমদত্ত পুত্র অতি ধীর।
অশ্বত্থামা জয়দ্রথ দুয়ে অতি বীর।।৭-৮
ইহা ছাড়া আছে আরাে বহু সেনা বীর।
যুদ্ধ লাগি সকলেই হয়েছে অস্থির।।৯
ভীষ্মের রক্ষিত সৈন্য অসংখ্য অপার।।
পাণ্ডব সৈন্যের রহে ভীম রক্ষা ভার।।১০
গুরুদেব নিজে গিয়া সসৈন্যে সদলে।
পিতামহ ভীষ্মে রক্ষা করুন সকলে।।১১
এমত কহিল যদি রাজা দুৰ্য্যোধন।
ভীষ্ম পিতামহ তাঁর শ্রদ্ধার কারণ।।
ঘন ঘন সিংহনাদ ছাড়ি উচ্চৈঃস্বরে।।
বীরগণ সকলেই শঙ্খধ্বনি করে।।১২
ভীষ্মের শঙ্খের শব্দ শুনিয়া তখন।।
রণ লাগি আগুয়ান হৈল সৈন্যগণ।।১৩
শুভ্র অশ্বযুক্ত রথে আনন্দিত মনে।।
হৃষিকেশ তাঁর শঙ্খ বাজান সঘনে।।১৪
পাঞ্চজন্য বাদ্য বাজে গােবিন্দর মুখে।
দেবদত্ত বাদ্য করে ধনঞ্জয় সুখে।।
ভীমকৰ্মা ভীমসেন পৌণ্ড্রধ্বনি করে।
অনন্ত বিজয় ৰাজে ধৰ্ম্মরাজ করে।।
নকুল বাজায় শঙ্খ সুঘােষ পুলকে।
করে ধ্বনি সহদেব মণিপুষ্পকে।।
মহারথী অভিমন্যু সুভদ্রা নন্দন।
আপনার শঙ্খ সবে করিল বাদন।।১৫-১৮
শব্দেতে পুরিল দেখ গগন-মণ্ডল।
তাহাতে কৌরব সৈন্য করে টলমল।।১৯
অর্জুন সে ধনুৰ্ব্বাণ করি উত্তোলন।
হৃষীকেশে কহিলেন বিনয় বচন।।২০
অর্জুন কহিলেনঃ-
দুরাত্মা কৌরব-পক্ষে কোন কোন জন।
আসিয়াছে যুদ্ধক্ষেত্রে করিবারে রণ।।
হেরিব সে সব এবে শুন ওহে হরি।
হে মাধব! রাখ রথ, তুমি ত্বরা করি।।২২-২৩
সঞ্জয় কহিলেনঃ-
ভীষ্ম দ্রৌণ কর্ণ কৃপ আদি যত জন।
যে সকল সমাগত যুদ্ধে রথীগণ।।
তাদের সম্মুখে রথ রাখিলেন হরি।
কহিলেন এবে সখা দেখহ বিচারি।।
উভয় পক্ষেতে দৃষ্টি করি সঞ্চালন।
দেখিলা অৰ্জ্জুন হয়ে আশ্চর্য্য তখন।।২৪-২৫
উভয়েরই পিতৃব্য আর পিতামহ।
আচাৰ্য মাতুল ভ্রাতা পুত্র-পৌত্রসহ।।
শ্বশুর সুহৃদ বন্ধু আত্মীয় স্বজনে।।
দেখিলেন সব্যসাচী সেই রণাঙ্গণে।।
উদ্বেলিত শােকাবেগে হইয়া কাতর।
অর্জুন কহিল শুন ওহে গদাধর।।২৬-২৭
অর্জুন কহিলেনঃ-
যুদ্ধার্থী আত্মীয়গণে সম্মুখে নেহারি।
বিবশ হয়েছে অঙ্গ, শুষ্ক মুখ হরি।।২৮
রােমাঞ্চিত অঙ্গ মাের কাঁপে থর থর।।
গাণ্ডীব পড়িছে খসি ওহে গদাধর।।২৯
আত্মীয় বধেতে দেখি নানা অমঙ্গল।।
চাহি না বিজয় সুখ রাজ্য অর্থ বল।।৩০-৩১
পুত্র পৌত্র বন্ধু বধি নাহি দেখি হিত।
তারা যদি বধে মােরে তাহাও সঙ্গত।।৩২-৩৪
ধরিত্রী তাে তুচ্ছ কথা শুন মম পণ।
ত্রিলােকের আধিপত্যে করিব না রণ।।৩৫
কুরুকুল নাশ করি বল দেখি হরি।
কেমনে হইব সুখী ওহে বংশীধারী।।৩৬
রাজ্য লােভে জ্ঞান শূন্য হইয়া কৌরব।
আত্মীয় নিগ্রহ পাপ না করে শরণ।।
জানিয়া সে দোষ আমি বল নারায়ণ।
কেন না ত্যজিব এ পাপ-প্রলােভন।।৩৭-৩৮
কুলক্ষয়ে নষ্ট হয় কুলধৰ্ম্ম যত।
ধৰ্ম্ম নষ্ট হলে পাপ বাড়য়ে সতত।
পাপের আশ্রয়ে হয় ভ্ৰষ্টা কুলনারী।
জারজ পুত্রাদি তাতে জনমে তাহারি।।৩৯-৪০
বর্ণসঙ্কর পাপে নরকে গমন।
এ যে দেখি হে মাধব! ভীষণ পতন।।
জল-পিণ্ড নাহি পাবে পিতৃ পিতামহ।
কুলাঙ্গার বলি শাপ দিবে অহরহ।।৪১-৪২
যাহাদের হয় কৃষ্ণ কুলধৰ্ম্মনাশ।
সদাই তাদের শুনি নরকে নিবাস।।৪৩
জেনে শুনে হেন পাপ করি দয়াময়।
রাজ্যলাভে নাহি কাজ শুন মহাশয়।।৪৪
প্রতিহিংসা বশে যদি বধে দুৰ্য্যোধন।
নিরস্ত্র হইনু আমি হের নারায়ণ।।৪৫
এত কহি সব্যসাচী ভারাক্রান্ত মনে
বসিলেন রথােপরি ত্যজি শরাসন।।
অর্জুন বিষাদ-যােগ সরল ভাষায়।
পশুপতি রচিলেন প্রথম অধ্যায়।।
(অৰ্জ্জুন বিষাদ-যােগ নামক’ প্রথম অধ্যায় সমাপ্ত)
পরবর্তী অধ্যায়
Comments
Post a Comment