পঞ্চম অধ্যায়

 পঞ্চম অধ্যায়



কৰ্ম্ম সন্ন্যাস যােগ 

অৰ্জন কহিলেনঃ

পর্বে তুমি কর্ম ত্যাগে দিয়া উপদেশ। 

পুনরায় কর্মযােগ কহ হৃষীকেশ৷৷ 

ইহাদের মধ্যে শ্রেষ্ঠ করিয়া নিশ্চয়।

কোন পথ শুভ মােরে বল দয়াময়।।১ 

শ্রীভগবান কহিলেনঃ-

সন্ন্যাস ও কর্মযােগ শুন ধনঞ্জয়।। 

উভয়েই মােক্ষদায়ী সত্য অতিশয়।। 

তথাপি এ কৰ্ম্মযােগ ওহে ধনঞ্জয়।। 

সন্ন্যাস হইতে কিন্তু শ্রেষ্ঠ অতিশয়।।২ 

জ্ঞানকর্ম ভিন্ন বলে অজ্ঞান যে জন।

বলেন ভিন্ন তাহা পন্ডিত সুজন।।। 

একটিও হয় যদি সম্যক্ সাধিত।। 

উভয়ের ফললাভ জানিবে নিশ্চত।।৩-৪

জ্ঞাননিষ্ঠ সেই সাধু লভে যেই স্থান। 

কৰ্ম্ম করি কৰ্ম্মযােগী পান সেই স্থান।।।

দেখেন উভয় যােগ একরূপ যিনি।। 

পরমার্থ প্রাপ্ত জেনাে কেবল সে তিনি।৫ 

কৰ্ম্ম ভিন্ন মহাবাহাে! সন্ন্যাস গ্রহণ। 

তাও জানিবে কিন্তু দুঃখের কারণ।। 

যােগযুক্ত হয়ে যত কর্ম যােগীগণ। 

অচিরেই প্রাপ্ত হন ব্রহ্ম সনাতন।।৬ 

যােগযুক্ত শুদ্ধচেতা বিজিত হৃদয়। 

সকল জীবের আত্মা যার আত্মা হয়।। 

এইরূপ জিতেন্দ্রিয় ব্যক্তি যেই জন। 

কর্ম করিয়াও তিনি বদ্ধ নাহি হন।।৭ 

দর্শন শ্রবণ ঘ্রাণ স্পর্শন ভােজন। 

গমন শয়ন আর নিঃশ্বাস গ্রহণ।। 

উন্মেষ নিমেষ আদি কর্ম সমুদয়। 

সব করে ইন্দ্রিয়েরা নিজে কিছু নয়।।

মনেতে জানেন যিনি এ কথা নিশ্চয়।। 

আমি নাহি করি করে ইন্দ্রিয় নিশ্চয়।।৮-৯

আসক্তি ফলেরে ত্যজি কর্মযােগীগণ। 

ইন্দ্রিয়াদি বুদ্ধি আর দিয়া কায়মন।।

মমতা বিহীন হয়ে কর্ম সম্পাদিয়া। 

কাতা শুদ্ধি লাভ করে কৰ্ম্ম মধ্য দিয়া।।১০-১১

নাহি যার অহংজ্ঞান ব্ৰহ্ম পদে মন। 

লভে নিত্য চির শান্তি সেই মহাজন।। 

ফলের নিমিত্ত কর্ম করে যেই জনে।। 

সেই জন বদ্ধ হয় কর্মের বন্ধনে।।১২ 

জিতেন্দ্রিয় যােগী ত্যাগ করি কর্মফল। 

এই দেহে করে বাস হয়ে অচঞ্চল।। 

নিজে নাহি করে কর্ম সেই ব্রতীজন। 

নাহি করে অপরেরে কর্মে নিয়ােজন।।১৩

দেহীর প্রভুত্ব কিংবা কর্মের সৃজন।। 

ভগবান নিজে নাহি করেন কখন।।

করেন ফল ভাগী কাহাকেও তিনি। 

কর্মের প্রচার হয় আপনা-আপনি।।১৪ 

ঈশ্বর কাহারাে পাপ কভু নাহি লন। 

পূণ্যও কাহারাে নাহি করেন গ্রহণ।।

অজ্ঞান কর্তৃক জ্ঞান সমাচ্ছন্ন রয়।। 

এই হেতু জীবগণ বিমােহিত হয়।। ১৫ 

আঁধারেরে অন্তর্হিত করিয়া তপন। 

পদার্থ নিচয়ে করে প্রকাশ যেমন।। 

সেইরূপ আত্মজ্ঞান নাশ করি মায়া।। 

সেইরূপ ঈশ্বরেরে দেয় প্রকাশিয়া।।১৬ 

নিয়ত যাহার মতি ঈশ্বরে অর্পিত। 

আত্মা যার বিভুপদে সতত নিরত।। 

যার হরিপদে মন সদা সর্বক্ষণ।। 

সতত ভাবনা করে অভয় চরণ।। 

পাপ তার জ্ঞান-যন্ত্রে সদা নিষ্পেষিত। 

ব্রহ্মাপরায়ণ সেই পরব্রহ্মে স্থিত।।১৭।

পরম পবিত্র মহাযােগী মহাজন। 

সমভাবে সৰ্ব্বজীবে করে দরশন।। 

বিনয়ী বিদ্বান বিজ্ঞ চন্ডাল ব্রাহ্মণে। 

গাে হস্তী কুকুর সদা দেখে সমজ্ঞানে।।১৮ 

ইহকালে স্বর্গলাভ করে সেই জন। 

যার মনে জাগে সমভাব সর্বক্ষণ।।

কেপ ব্রহ্মে তার সদা অবস্থান। 

হইয়াছে পরব্রহ্মে ব্রহ্মরূপ জ্ঞান৷৷১৯ 

প্রিয়বস্তু লাভে যার সুখ নাহি হয়। 

খে নাহি হয় যার অপ্রিয় বিষয়।।। 

সেই জ্ঞানী স্থিরবুদ্ধি মমতা-বিহীন। 

করি সদা ব্রহ্মলাভ হন ব্রহ্মে লীন।।২০ 

নাহিক আসক্তি যার বাহ্যেন্দ্রিয়গণে। 

অপার আনন্দ যার সদা রয় প্রাণে।। 

সমাধি সাধন করি ব্রহ্মযােগ শেষে। 

অপার আনন্দ লাভ করে ভাগ্যবশে।।২১ 

বিষয় ভােগেতে সুখ যাহা ধনঞ্জয়। 

দুঃখের কারণ তাহা জানিও নিশ্চয়। 

কিছুতেই নাহি সুখ বিনা আরাধনা। 

জ্ঞানীজন করে সদা অপার সাধনা।।২২

হৃদয়ে যাহার সুখ হৃদয়ে আরাম। 

হৃদয়েতে জ্যোতি যার হৃদয়ে বিরাম।।

ব্রহ্মগামী ব্ৰহ্মনিষ্ঠ যােগী সেই হয়। 

নির্বান মুক্তি লাভ জেনাে সুনিশ্চয়।।২৩-২৪

জনমে কামক্রোধ অন্তিমে যাহার।

চিত্ত যার সুসংযত পার্থ অনিবার।। 

আত্মার স্বরূপ জানি হেন যােগীজনে। 

লভয়ে নির্বাণ ব্রহ্ম জীবনে মরণে।।২৫-২৬ 

বাহ্য চিন্তা মন হ’তে করি বিতাড়িত।

রমধ্যে নেত্রদ্বয়ে করি সংস্থাপিত। 

ইচ্ছা ভয় ক্রোধহীন হেন মুনিজন। 

মােক্ষ-পরায়ণ সদা মুক্ত অনুক্ষণ।।২৭-২৮

যপতপ করি ভােগ আমি সমুদয়। 

তাদের পালক আমি সকল সময়।। 

সেইমত এই ভাবে জানিয়া আমায়। 

লভয়ে পরম শান্তি আমার কৃপায়।।২৯

কহিনু সন্ন্যাস-যােগ সরল ভাষায়।। 

পদ্যছন্দে রচে শশী পঞ্চম অধ্যায়।। 

(কৰ্ম্ম সন্ন্যাসযােগ’ নামক পঞ্চম অধ্যায় সমাপ্ত)

পরবর্তী অধ্যায়




Comments